অমিতের বই

পরিচিতি

অমিত সাহা’র জন্ম বীরভূমের পাখুড়িয়া গ্রামে, ১৩৯০ বঙ্গাব্দের ২৩ শে আশ্বিন। বাবা কালোবরণ সাহা, মা অমিতা সাহা, স্ত্রী কুসুমিতা, পুত্র ঋত, ভাই অতনু—এদের নিয়েই অমিতের সংসার। তিনি বর্ধমানের এম ইউ সি উইমেন্স কলেজের সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক। বাংলা সাহিত্য চর্চা তাঁর নেশা—জীবন ধারণের রসদ। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করে গবেষণাও সমাপ্ত করেন। বর্তমানে কর্মসূত্রে বোলপুরের বাসিন্দা। অমিতের বাবা প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক হয়েও কৃষক। মৃৎশিল্পী, সংস্কৃতি জগতের মাটির মানুষ। মাটির প্রতি টান বাবার কাছ থেকেই। অমিতের বাবা নিজে নাটক ও যাত্রাপালায় অভিনয় করার পাশাপাশি কৌতুক নাট্য লিখতেন। কার্তিক-অগ্রহায়ণ মাসে ভোরের ‘টহল’গান লিখে অন্যকে দিয়ে গাওয়াতেন। এসব থেকেই অমিতের লেখালেখিতে আগ্রহ জন্মায়। অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন প্রথম কবিতা স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে ‘১৪০০ সাহিত্য’, ‘নন্দিনী’, ‘মণিকর্ণিকা’ সহ বীরভূমের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় লিখেছেন। এখন পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশের নানান পত্রিকায় লেখেন। এযাবৎ ‘কবিতা আশ্রম’, ‘কৃত্তিবাস’, ‘মাসিক কৃত্তিবাস’, ‘দেশ’, ‘নতুন কবিসম্মেলন’, ‘উদ্বোধন’, ‘ভারত বিচিত্রা’, ‘জলধি’ প্রভৃতি পত্রিকায় তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। কবিতার পাশাপাশি তাঁর লেখা বিষয়ভিত্তিক নানান প্রবন্ধ বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। বিনয় মজুমদার, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, মনুজেশ মিত্র প্রমুখ অমিতের প্রিয় কবি। প্রিয় কথাসাহিত্যিক বিভূতিভূষণ। অমিত শূন্য দশকের শেষের দিকে লিখতে এসে আটটি কাব্যগ্রন্থ লিখেছেন— ‘পাতাঝরা এবং’, ‘বৃষ্টি ভাঙে যখন’, ‘বিরহ কথকতা’, ‘ক্লোরোফিলের কান্না’, ‘শূন্যতার আরও কাছে আসি’, ‘একটি মিলন দাবি’, ‘গোপনে ঈশ্বরচিহ্ন’ এবং ‘আমার স্বাধীন পাখি’। পেয়েছেন ‘কবি বিনয় মজুমদার স্মৃতিরক্ষা কমিটি’ ও ‘কবি বিনয় মজুমদার সাধারণ গ্রন্থাগার’ প্রদত্ত ‘একুশ সাহিত্য সম্মান’। প্রকাশিত হয়েছে তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘জোনাকির ছেলেমেয়ে’, অটিজমের জগৎ ও জীবন নিয়ে সংবেদনশীল এই উপন্যাস ইতিমধ্যে পাঠকপ্রিয়। তিনি নিজে অটিস্টিক সন্তানের বাবা। অটিজম বিষয়ে নিজের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা, বিশেষশিশুদের বিশেষ জগৎ, অভিভাবকদের অসহায়তা, সামাজিক অবহেলা সবই উঠে এসেছে তাঁর উপন্যাসে। অটিজম সচেতনতা বাড়ানোর জন্য কখনও লেখাকে আশ্রয় করেছেন তিনি, কখনও বা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করেন, ‘পৃথিবীতে প্রাণের সৃষ্টি হয়েছে মনের সেবা করার জন্য। বিষাদসুন্দর এই জীবন বিভিন্ন সত্তার সমষ্টি। সমস্ত সত্তার দায়ভার বহন করে যাওয়াই জীবন-দীক্ষা।’ তাঁর লেখায় তাই প্রেমিকসত্তা, পুত্রসত্তা, পিতৃসত্তা, কবিসত্তা, জীবসত্তা মিলেমিশে আছে। প্রকৃতি আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে তাঁর কবিতায়। লেখালেখি সূত্রে পরিচয় হয় নয়ের দশকের বিশিষ্টকবি বিভাস রায়চৌধুরীর সঙ্গে। তাঁর ভালবাসা-সান্নিধ্যে ‘কবিতা আশ্রমে’র সঙ্গে বসত শুরু হয়। বদলে যায় কবিতার যাপন। আকাঙ্ক্ষাশূন্য ও নির্লিপ্ত হয়ে সাহিত্যসেবায় নিজেকে এগিয়ে দেন। বর্তমানে ‘কবিতা আশ্রম’ পত্রিকার কার্যকরী সম্পাদক। অমিতের কলমের সৎ উচ্চারণ—“মহাবিশ্ব নিঃস্ব নয়—অবজ্ঞাবিহিত/ সব হারানোর শেষে যে আমি জেগেছে/ সে দৃশ্যের অগোচরে দৃশ্যকে দেখেছে,/ মানুষমাত্রই জেনো, সুখে নিপীড়িত!” এই কবিতা তো অদ্বৈত-বেদান্তের কথা বলে! ভারতীয় দর্শনের নিবীড় অনুশীলন এবং জীবন চর্যা তাঁর লেখাকে দার্শনিক চেতনায় সমৃদ্ধ করেছে। “আত্মনঃ মোক্ষার্থং জগদ্ধিতায় চ”—বিবেকানন্দের এই আদর্শকে আত্মীকরণের চেষ্টা করেন তিনি। 

Scroll to Top